ময়মনসিংহে হবে কেয়ারগিভার ইনস্টিটিউট, প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে কাজের সুযোগ

2

ময়মনসিংহে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী।

তিনি জানিয়েছেন, জাপানের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১৬ লাখ কেয়ারগিভার পাঠানো হবে, এ লক্ষ্যেই ময়মনসিংহে একটি আন্তর্জাতিক মানের কেয়ারগিভার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম জোরদার বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে সচিব বলেন, স্বাস্থ্য হলো মৌলিক মানবাধিকার। রাষ্ট্র নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবা দিতে বাধ্য। এমনকি কেউ যদি চিকিৎসার অভাবে মারা যায়, তাহলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগও থাকতে হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, নগর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের। তবে এখনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার হাসপাতাল ও সেবা-ব্যবস্থা প্রত্যাশিত মাত্রায় গড়ে উঠেনি। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন।

সচিব জানান, বর্তমানে সারাদেশে ১৪ হজারের অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। কিন্তু অনেক ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো অপ্রতুল ও খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগ সড়ক স্থাপন করার দায়িত্ব আমাদের। এতদিন এই দাবি ওঠেনি, এজন্য আমি দুঃখিত। তবে এখন থেকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো নির্মাণ করব।

স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ব্যবহার করছে বলে উল্লেখ করে সচিব বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়ক পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি জেলা পরিষদ, উপজেলা

পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে নির্দেশ দেন যাতে ছোটখাটো মেরামত ও উন্নয়নকাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তিনি আহ্বান জানান, প্রতিবছর আমরা জেলা পরিষদের মাধ্যমে মসজিদ-মন্দিরে লাখ লাখ টাকা দিই। সেই অর্থের একটি অংশ যদি কমিউনিটি ক্লিনিককে আরও সক্রিয় করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, যেমন– ওষুধ, সরঞ্জাম বা ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ। তাহলে জনগণের উপকার হবে।

জাপান আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৬ লাখ কেয়ারগিভার নেবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ময়মনসিংহে একটি আন্তর্জাতিক মানের কেয়ারগিভার ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। এতে স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাবে।

তিনি আরও জানান, কেয়ারগিভারদের জন্য দুটি স্তরে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে, একটি ফাউন্ডেশন কোর্স মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দক্ষতা অর্জনের জন্য। অন্যটি রিফ্রেশার কোর্স – প্রতিবছর একবার হালনাগাদ জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য। প্রশিক্ষণের কারিকুলাম তৈরি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আর বাজেট দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সচিব বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের নিয়মে ক্রসকাটিং ইস্যুতে অন্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার কথা বলা আছে। স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার মিলে কাজ করলে প্রান্তিক জনগণ আসলেই উপকৃত হবে। আমরা চাই, সীমাবদ্ধতা থাকলে একজন অন্যজনকে সহযোগিতা করবে।

সেমিনারে সচিব স্পষ্টভাবে জানান, স্থানীয় সরকার কেবল অবকাঠামো নয়, বরং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য কেয়ারগিভার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা; সব মিলিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এটি হবে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক (ময়মনসিংহ) মুফিদুল আলম।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন– কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের মাঠ প্রশাসনের পরিচালক আসিফ মাহমুদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক মো. মতিউর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. প্রদীপ কুমার সাহা, ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here