
ধোবাউড়া প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা বাজার সংলগ্ন কংস নদীর উপর নির্মিত বেইলী ব্রিজের মাঝখানের একটি স্ল্যাব মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এতে সড়কপথে যান চলাচল মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়েছে। যানবাহন, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের পারাপার হচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, ‘ব্রিজ নয়, যেন মৃত্যুকূপ’। ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, কিন্তু এখনো স্থায়ী সংস্কার হয়নি। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে শতশত যারবাহন ও হাজারো মানুষ।
ব্রিজটির দুই পাশে রয়েছে একাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। গোয়াতলা, দক্ষিণ গোয়াতলা, চাপালীসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই ব্রিজ দিয়েই যাতায়াত করেন। মঙ্গলবার রাতে স্ল্যাব ভেঙে পড়ার পর এখন তারা বাধ্য হচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে ব্রিজের উপর দিয়ে চলছে।
ধোবাউড়া, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও হালুয়াঘাটসহ আশপাশের উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এই ব্রিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শত শত মোটরসাইকেল, সিএনজি, পিকআপ ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে এই সেতুর উপর দিয়ে। ব্রিজটির আংশিক অংশ ভেঙে যাওয়ায় জনসাধারণের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি মাঝে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এর আগেও ব্রিজটিতে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত টেকসই কোনো সংস্কার হয়নি। মঙ্গলবার রাতে স্ল্যাব ভেঙে নদীতে পড়ার পর বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসী শাহ আলম যিনি গোয়াতলা এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিদিন এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, এই ব্রিজটা কতবার ভাঙবে আর কতবার মেরামত হবে? আমরা প্রতিদিন এই পথে চলি, অথচ জানি না আর কতদিন বেঁচে ফিরতে পারব। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, কেউ দেখে না! এখন যদি কারও পড়ে গিয়ে প্রাণ যায়, তখন কি তবে টনক নড়বে?
এ বিষয়ে ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, বেইলী ব্রিজটির মাঝখানের স্ল্যাবটি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই আমরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও শ্রমিক পাঠিয়েছি। আজকের মধ্যেই ব্রিজটি মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, এটি সাময়িক সমাধান মাত্র। স্থায়ী সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
এদিকে, ব্রিজের মাঝখানের স্ল্যাব ভেঙে পড়ায় যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। বিষয়টি ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেনের দৃষ্টিগোচর হলে, তার সরাসরি হস্তক্ষেপে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারকাজ শুরু হয় এবং বিকেলের মধ্যেই ব্রিজটি সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়।
এলাকাবাসীর দাবি বারবার দুর্ঘটনা ও ঝুঁকির মুখে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের দাবি, এই সেতুর স্থায়ী সংস্কার বা নতুন করে একটি টেকসই ব্রিজ নির্মাণ ছাড়া জনভোগান্তির কোনো সমাধান নেই। তারা অবিলম্বে বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।