
নিজস্ব প্রতিনিধি : ময়মনসিংহে ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে বাসা খুঁজতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মোবাইল, ল্যাপটপ ও নগদ ২৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন আনন্দমোহন সরকারি কলেজের গনিত বিভাগের এক ছাত্র। শুক্রবার নগরীর গুলকিবাড়ীর ফখরুজ্জামান টাওয়ারে প্রতারণার শিকার নাজমুল হাসান নাঈম (২৩) জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ভুরারবাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে। তাকে আটকে রেখে মারধরও করা হয়। এ নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ শুক্রবার রাতে নগরীর গুলকিবাড়ী এলাকা থেকে দুই তরুণীকে গ্রেফতার করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম জানান, এই নারী চক্রটি নগরীতে বাসা ভাড়া নিয়ে ফেসবুক পেজ বা হোয়াটসঅ্যাপে সাবলেট ভাড়ার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বা সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেদের মেসেজ পাঠায়। এরপর বাসা দেখতে এলে এদের আটকে রেখে নানাভাবে প্রতারণা করে। চক্রের নারী শিক্ষার্থীরা তরুণ বা শিক্ষার্থীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে পরিবারকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে মারধর করে ব্ল্যাকমেইল করে।
এদিকে, এ ঘটনায় থানায় মামলার পর দুই তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) ও ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েল (১৯)। তাদের দুজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়। সাদিয়া জাহান ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে আর ফারিয়া আক্তার তাড়াইল উপজেলার সহিলাটি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম ফকির জানান, শনিবরা দুই তরুণীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। দুজন আদালতে স্বীকারোক্তি না দিলেও পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ফেসবুকে দুই তরুণীর বিলাসী জীবনের ছবি-ভিডিও দেখা গেছে। পারিবারিকভাবে তাঁরা এত সচ্ছল না হলেও বিলাসী জীবনের অর্থের উৎস কী, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চক্রের অন্য দুই নারী ও চার পুরুষকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। রিমান্ডে এনে সবকিছু বের করা হবে।
এদিকে, টু-লেট বিজ্ঞাপনের ফাঁদে প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ ও দুই তরুণীকে গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে তাঁদের বিলাসী জীবনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হতে থাকে। কলেজ পড়ুয়া দুই তরুণীর বিলাসী জীবন ও প্রতারণা নিয়ে ফেসবুকে নানা আলোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে মামলার বাদী ভুক্তভোগী কলেজছাত্র নাজমুল হাসান নাঈম এর অতীতে প্রতারণার একটি বিষয় সামনে আসে। তিনি নিজেও মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ভূক্তভোগীর অতীতে প্রতারনার বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এসআই মাহবুব আলম ফকির আরও বলেন, মামলার বাদী কলেজছাত্র প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার হয়েছিলেন, বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। তবে আগে জানতেন না। এখন বাদী নিজেও ফোন বন্ধ করে ফেলেছেন। এখানে বাদীর বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।