যুবলীগ নেতার হাতে ‘জুলাইযোদ্ধা’ স্বাস্থ্য কার্ড, তদন্তে কমিটি

5

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেননি। তারপরও আন্দোলনে আহত দেখিয়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার এক যুবলীগ নেতা ‌‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড গ্রহণ করছেন যুবলীগ নেতা তারা মিয়া (চিহ্নিত)

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে যাদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে মো. তারা মিয়া ছিলেন। তিনি মশাখালী টানপাড়া গ্রামের হক মিয়ার ছেলে। তারা মিয়া উপজেলা মশাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা।

মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড পাওয়া তারা মিয়া সক্রিয়ভাবে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেনের আস্থাভাজন। তারা মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের ছবি সাঁটিয়ে মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন। তার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও রয়েছে।

বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর একদিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় চোখে নিজের ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাত পান। এর সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া মিয়া ফোনে বলেন, “২০০০ সালের দিকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। যেসব ছবি ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো এডিট করা। গাজীপুরের মাওনাতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলাম। আমি ‘জুলাইযোদ্ধা’।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভিন্ন ঘটনাকে জুলাই আন্দোলনে আহত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কি-না যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। যাচাইয়ে তারা মিয়া জুলাইযোদ্ধা না হওয়ার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

স্বাস্থ্য কার্ড কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে যুবলীগ নেতা তারা মিয়া ছাড়াও আরও পাঁচজনের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। তারা হলেন নূরে আলম সালেক, মো. রিমন মিয়া, ওয়াজেদ আলী শেখ, অপূর্ব হিমেল রানা ও মোসাম্মৎ রুমী।

এসময় উপস্থিত থাকা গফরগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বর্তমান ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু গিয়ে দেখি জুলাই যোদ্ধাদের অনুষ্ঠান। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কোনো ভুল হয়ে থাকলে বা কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হলে তা সংশোধন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরইমধ্যে তারা মিয়ার আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here