ফার্ম এন্ড হ্যাচারীর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে

7

 

হালুয়াঘাট প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার জুগলী ইউনিয়নের কালাপাগলা গ্রামে প্রায় ১০ বছর আগে গড়ে উঠে ‘রানা ফার্ম এন্ড হ্যাচারী’ নামে একটি কারখানা। কারখানাটিতে রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ডিম উৎপাদনকারী লেয়ার মুরগী। মুরগীগুলোর বিষ্ঠা থেকে প্রতিদিন সৃষ্টি হয় কয়েকটন বর্জ্য ও সাথে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশে তীব্র দুর্গন্ধে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

স্থানীয়রা জানান, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই তাদের। এসটিপি না থাকায় কারখানার বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে, পাশে থাকা ভুড়ি ভোগাই নদীতে। এতে যেমন বাড়ছে দূষণ পাশাপাশি পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে নদীর মাছ থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারা দ্রুত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করার আহ্বান জানান।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তাদের নেই কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকরণ । ফার্ম এর ভিতর বড়বড় পুকুর করে সেখানে এসব বর্জ্য ও কেমিক্যাল জমিয়ে রাখা হয়। রাতের বেলায় কারখানা থেকে নদীর সাথে করা ড্রেন দিয়ে জমানো বর্জ্য ও কেমিক্যাল প¦ার্শবর্তী ‘বুড়ি বুঘাই’ নদীতে ফেলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রানা ফার্ম এন্ড হ্যাচারী কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকান্ডে ‘বুড়ি বুঘাই’ নদী ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সাথে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই কারখানাটি হওয়ার আগে নদীটি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি ও মৎস্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। বর্তমানে নদীটিতে মাছ নেই। পানিতে তীব্র দুর্গন্ধে আশেপাশের কালাপাগলা, জুগলী, সোহাগপুর, জয়মঙ্গলসহ কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। শুধু স্থানীয়রাই নয়, হালুয়াঘাট-নালিতাবাড়ি উপজেলায় গাড়ি দিয়ে চলাচল করা হাজারো মানুষ কালাপাগলা এলাকায় এসে, দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে যেতে হয়। দুর্গন্ধের কারণে এসব এলাকায় প্রচুর পরিমানে মাছি বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধদের উপর। ভালো জায়গা থেকে কেউ এই এলাকায় আত্মীয় করতেও আসেননা। অভিযোগ রয়েছে গত কয়েকদিন আগে সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে সদ্য পিচ হওয়া ‘কালাপাগলা-জয়মঙ্গল’ পাকা সড়ক কেটে, সেখান দিয়ে বর্জ্য নদীতে ফেলার জন্য আরেকটি ড্রেন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অথচ সেটি প্রশাসনকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

স্থানীয় কালা পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাচ্ছুম বলেন, আমরা দুর্গন্ধ আর মাছির জন্য পড়াশোনা ঠিক মতো করতে পারি না। হয় এই ফার্ম বন্ধ করা হোক না হয় দুর্গন্ধ থেকে আমাদের মুক্তি দেওয়া হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা হাজেরা বেগম বলেন, প্রতি রাতে ড্রেন দিয়া বর্জ্য ছাড়ে। এই দুর্গন্ধে ঘরে টিকুন যায়না। নদীতে কোন হাঁস মুরগি যায়তে পারে না। আমরা এর প্রতিকার চাই।

রানা ফার্ম এন্ড হ্যাচারীর ম্যানেজার শাহীন আলম মঠোফোনে বলেন, সবকিছু নিয়মের মধ্যে হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে সড়ক কেটে ড্রেন নির্মাণের বিষয়ে তিনি জানান এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার কে জানানো হয়েছে। উপজেলার কারো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

এতো সব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আলীনূর খান বলেন, কারখানাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাদের কারখানায় উৎপাদিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে । আমরা প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।

পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ উপ-পরিচালক মো. মেজ-বাবুল আলম বলেন, এই কারখানাটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় খুব শিগ্রই কারখানাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে চর্ম, ডাইরিয়াসহ নানা রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয়রা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here