
ময়মনসিংহে কৃষিকাজে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। তবে এর পেছনে রয়েছে অপ্রত্যাশিত এক কারণ—জুয়া। কৃষিশ্রমিকরা জুয়ায় আসক্ত হচ্ছেন। কৃষিকাজে সময় না দিয়ে তারা মত্ত থাকছেন জুয়ায়। ফলে মাঠে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল ঘরে তোলার মৌসুম শুরু হলেও অনেক কৃষকই সময়মতো শ্রমিক পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরুণ ও মধ্যবয়সী শ্রমজীবী মানুষের একটি অংশ জুয়ায় ঝুঁকে পড়েছে। গ্রামের অনেক তরুণ-যুবক সারাদিন জুয়ায় মেতে থাকায় কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে, বাড়ছে খরচ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। জুয়ার কারণে শুধু কৃষিকাজই নয়, পরিবারেও দেখা দিচ্ছে অশান্তি। অনেক দিনমজুরের পরিবারে আয় বন্ধ হয়ে গেছে। যুবকদের একটি অংশ জুয়ায় হেরে মাদক, চুরি, এমনকী ঋণের দায়ে গ্রাম ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুয়া এখন শুধু তাসে সীমাবদ্ধ নয়, স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন গেম বা অ্যাপেও অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন ভার্চুয়াল জুয়ায়। ‘লুডু’ বা ‘স্পিন গেম’র আড়ালে গোপনে টাকার লেনদেন হচ্ছে। আর জুয়ায় আসক্ত বড় একটি অংশ কৃষিশ্রমিক। দ্রুত ভাগ্য বদলের আশায় এসব শ্রমিকরা কৃষিকাজের তুলনায় সময় দিচ্ছেন জুয়ায়। ফলে দেখা দিয়েছে কৃষিশ্রমিক সংকট। দিনমজুর না পেয়ে কৃষকরা বাধ্য হয়ে জমি ফেলে রাখছেন বা বিকল্প খরচে যন্ত্র ভাড়া করছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। অনেকে সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

জেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উমানাথপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল হক বলেন, “এই ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে বিপুল পরিমাণ শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। এজন্য প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন। তবে এখন আর আগের মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। আগে যারা দিনে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি নিয়ে কাজ করতো, এখন তারা বলে— ‘দুই ঘণ্টা তাস খেলে ১০০০ টাকা জিতি, তাহলে মাঠে কাজ করার কী দরকার আছে!’ কেউ আর মাঠে আসতে চায় না।”
তিনি বলেন, ‘আগে একটা ডাকে ১০-১২ জন ছেলে জমিতে কাজ করতে চলে আসতো। এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাকলেও কেউ আসে না। পরে শোনা যায়, মোবাইলে গেম খেলছে। কৃষিকাজের মৌসুম চলছে, অথচ মাঠে নেই পর্যাপ্ত শ্রমিক। শ্রমের বদলে তাস ও মোবাইল স্ক্রিনে অনেক শ্রমিকের ডুবে থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’