
স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পাথারিয়া গ্রামে অবস্থিত ভাষাসৈনিক শামছুল হক কলেজে জমিদাতা, শিক্ষক ও অধ্যক্ষের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ছয় মাস ধরে মূল ক্যম্পাস থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান নিজ বাড়ির পাশে টিনের দোচালা ঘর তৈরি করে আলাদা ভবনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, তারাকান্দা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকুয়া ইউনিয়নের পাথারিয়া গ্রামে কলেজটি অবস্থিত। ফুলপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ভাষা সৈনিক শামছুল হকের নামে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি ২০১৪ সালে প্রায় ৪০ কাঠা জমির ওপর গড়ে ওঠে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্ত হয়।
এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকেই কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, প্রশাসনিক অনিয়ম ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং যেসব শিক্ষক তাঁর নির্দেশ মানছেন না, তাঁদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে হয়রানি করছেন।
স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এই অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়ার পর থেকেই অধ্যক্ষ কলেজে আসা বন্ধ করেন। পরে নিরাপত্তার অজুহাতে নিজের বাড়ির পাশে টিনের একটি ভবন নির্মাণ করে কিছু শিক্ষক ও অল্প কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে সেখানে ক্লাস শুরু করেন। ফসলি জমির মাঝখানে নির্মিত ওই ঘরেই এখন জাতীয় পতাকা উড়ছে। সেখানে দুই কক্ষে ক্লাস চললেও শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ছয়জন।
মূল কলেজের জমিদাতা গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, অধ্যক্ষ কলেজ ধ্বংসের চক্রান্ত করছেন। নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ বাণিজ্য করে টাকা নিয়েছেন। এখন নিজের খেয়াল খুশিমতো আরেকটি কলেজ ভবন বানিয়ে আলাদা ক্লাস নিচ্ছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
তিনি আরো বলেন, যেসব শিক্ষক-কর্মচারী তার কথা শুনছেন না, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওই অস্থায়ী কলেজে যাওয়ার জন্য নানা হুমকি দিচ্ছেন।
কলেজের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ২০১৫ সালের নিয়োগ বোর্ডের আমি একজন সদস্য। বোর্ডের নিয়োগের বাইরে অধ্যক্ষ টাকার বিনিময়ে একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা এসবের প্রতিবাদ করলে তিনি কলেজের মূল ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজের পছন্দমত ঘর তৈরি করে কলেজ পরিচালনা করছেন।
কলেজের শিক্ষক মোখলেছুর রহমান বলেন, আমি দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায়ও নিয়মিত মূল ক্যম্পাসের ক্লাসে যাই। কিন্তু অধ্যক্ষের আলাদা ভবনে না যাওয়ায় আমার বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানা যায়, কলেজে বাণিজ্য বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও সেখানে তিনজন প্রভাষক এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আবার নিয়ম অনুযায়ী দুইজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রাখার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ তৃতীয় একজনকে নিয়োগ দেন, যা নিয়ে মামলা চলছে। এসব নিয়োগের বিনিময়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ।
এই বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ায় আমি বাধ্য হয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে আমার নিজস্ব জায়গায় টিনের চালা ভবন তৈরী করে ক্লাস পরিচালনা করছি।
বোর্ডের অনুমতি ছাড়া আলাদা স্থানে ক্লাস পরিচালনা বৈধ কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর সম্মতিতেই এটি করেছি। অন্য কোনো উপায় ছিল না।
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসাইন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে শিক্ষা মাউশিকে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর এ. কে. এম. আলিফ উল্লাহ আহসান বলেন, অধ্যক্ষের এভাবে কলেজ পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আগামী ১৭ নভেম্বর উভয় পক্ষকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত থেকে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে দুই ভাগে বিভক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিভক্তির কারণে তারা মানসিকভাবে চাপে আছেন। ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং তারা দ্রুত এই অচলাবস্থার অবসান চান।